সাধারণ ক্যাডারে ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার গেলে ক্ষতি কী?

সাধারণ ক্যাডারে ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার গেলে ক্ষতি কী?

BCS



বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত। কোনো কোনোটির রয়েছে বেশ কিছু সাব ক্যাডার। আবার সাব ক্যাডারদের মধ্যে থাকে বিভাজন। যেমন বিসিএস শিক্ষার একটি সাব ক্যাডার সাধারণ শিক্ষা। 

এর আওতায় প্রায় গোটা পঞ্চাশেক বিষয় আছে। এর বিভাজন প্রতিটিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র সত্তা। নিয়োগবিধি মোটামুটি এক হলেও পদায়ন, পদোন্নতি এমনকি সুবিধাদিও সব ক্ষেত্রে অভিন্ন নয়। তাই আন্তক্যাডার বৈষম্যের পাশাপাশি ক্যাডারের অভ্যন্তরেও থাকে বৈষম্য।

 যেমন গণিত বিভাগের অধ্যাপকের শূন্য পদে ইংরেজি কিংবা অন্য কোনো বিভাগের শিক্ষক সিনিয়র হলেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। তৎসত্ত্বেও যতটা সম্ভব পার্থক্য কমানোর চেষ্টা চলছে।

BANK MATH & ENGLISH WRITTEN FACT

সেটা যা–ই হোক, গোটা সিভিল সার্ভিসের পরিচিতি বিসিএস হিসেবে। বিভিন্ন স্তরে বেতন–ভাতাদিও সমান। কাজের ধরনের জন্য কোনো কোনোটি সমাজের দৃষ্টিতে একটু উজ্জ্বল মনে হয়। জাতীয় জীবনে অবদান রাখার দৃশ্যত সুযোগও তাদেরই বেশি। তাই নিয়োগ পরীক্ষায় অনেকের নজরে থাকে সেগুলো। 

এর মধ্যে রয়েছে প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডার। বিসিএস - প্রশাসন/পররাষ্ট্র/পুলিশ প্রস্তুতি   ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষাসহ বিশেষায়িত পদে অন্তর্ভুক্তির জন্য সেসব বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়। 

অন্যদিকে উপরিল্লিখিত তিনটি ক্যাডার ছাড়াও হিসাব ও নিরীক্ষা, আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট, সমবায়, আনসার, তথ্য এসব ক্যাডার সাধারণ্যে বিশেষায়িত ক্যাডার হিসেবে বিবেচিত হয় না। যেকোনো শৃঙ্খলা থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এসব পদের জন্য প্রতিযোগিতায় আসতে পারেন। আসছেনও। এমনকি আসছেন অনেক দিন আগে থেকে। 

পাকিস্তান সময়কালের প্রথম দিকে কৃষিতে¯ স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন প্রার্থী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নেমে সিএসপি হন। চাকরিজীবনে তিনি প্রশাসনে সর্বোচ্চ পদে ছিলেন সফলভাবে।

বিসিএস গণিত প্রস্তুতি নিয়ে যারা টেনশনে আছেন তাদের জন্য কিছু পরামর্শ ।

 ইদানীং বিশেষায়িত ডিগ্রিধারীদের সাধারণ ক্যাডারের চাকরিগুলো আকর্ষণ কিছুটা বেশি করছে। প্রতিযোগীদের গড় অনুপাতে তারা তেমন বেশি না হলেও পরীক্ষায় মেধার ছাপ রেখে পেয়ে যাচ্ছেন সাধারণ ক্যাডারের বেশ কিছু পদ। এর পক্ষে–বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা হচ্ছে।

অতি সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সরকারের কাছে পেশ করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পরীক্ষার একটি সম্মানজনক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

 অতীতের অন্য সব বিসিএস পরীক্ষার নিয়ম আমূল পরিবর্তন করে শুধু মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর এটিই প্রথম ব্যাচ। সুতরাং ধরে নিতে হবে কোনো প্রাধিকারের জোর নয়, মেধার বরাতে তাঁদের এ অর্জন।

 নজরে আসছে প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকার সর্বোচ্চ স্থান তিনটির সব কটিতে প্রকৌশলীরা স্থান নিয়েছেন। 

বিসিএস (প্রশাসন/পররাষ্ট্র/পুলিশ) প্রস্তুতি 

এতে গণমাধ্যমে আসছে নানা প্রতিক্রিয়া। বলা হচ্ছে, সরকার প্রকৌশল, চিকিৎসা ও কৃষিশিক্ষার জন্য সাধারণ শিক্ষার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করে। অবশ্য এসব পেশার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

তা–ও এ ধরনের বিশেষায়িত ডিগ্রি নিয়ে তাঁদের কেউ কেউ চলে যাচ্ছেন বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারগুলোতে। এটা আপাতদৃষ্টে অসংগত মনে হতে পারে। তবে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে এর যৌক্তিকতাও খুঁজে পাওয়া যাবে। আর তাঁরা এখানে স্থান নিয়েছেন নিজেদের মেধার জোরে। এ ক্যাডারগুলোও তুলনামূলক মেধাবী কর্মকর্তা চায়।

BCS/ BANK/ JOB এর পড়াশুনা শুরুর আগে যা যা করণীয়

আমাদের সিভিল সার্ভিসের উত্তরাধিকার শতাব্দীপ্রাচীন অবিভক্ত ভারতে। ভারত এটা আরও জোরদার করেছে। আমরাও ধরে রেখেছি। ভারতেও বর্তমানে উচ্চতর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় আইআইটিগুলোর (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) স্নাতকদের সাফল্য অন্য অনেককে পেছনে ফেলছে।

 কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে শীর্ষ পদগুলোতে ঠাঁই পায় গুটিকয়। অথচ আইআইটিগুলো সিভিল সার্ভিসের সাধারণ ক্যাডারে লোক জোগানোর জন্য এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তা–ও তারা যাচ্ছে। আর ভারতীয় সমাজ এটাকে নিচ্ছে সহজভাবেই। সুতরাং এ দেশেও এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। 

এমনকি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করা স্নাতকেরা এসব ক্যাডারে যাবেন না, এমন কথাও কেউ কেউ বলছেন। কিন্তু অনেক আগে থেকেই যাচ্ছেন এবং হচ্ছেন সফল।

শিক্ষকতা করেও প্রথম পছন্দে শিক্ষা ক্যাডার নেই কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ্যার একজন শিক্ষক সরকারি বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করে এসে কিছুদিন বাদে চাকরি ছেড়ে দেশের অতি উঁচু মানের খ্যাতনামা অসাধারণ জনপ্রিয় কথাশিল্পী হয়েছেন। 

লিখেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় নাটক ও সিনেমা। তাঁর অবদানকে আমরা একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানশিক্ষকের অনেক ওপরেই বিবেচনা করি। তেমনি বুয়েট থেকে স্নাতক হয়ে আরেকজন খ্যাতনামা লেখক ও সংস্কৃতি সংগঠক নজরকাড়া কাজ করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বাংলা দৈনিকে। 

তিনি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ না–ই করলেন। এখন যেখানে যেটুকু করছেন, তা করার লোক ভূরি ভূরি নেই। সুতরাং নিয়মের ব্যতিক্রম কিছু থাকবে এবং তা তারা স্বেচ্ছায় বেছে নেবেন, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হতে পারে না।

কোচিং না করে ও খারাপ জিপিএ নিয়েও বিসিএস পাওয়া সম্ভব!

এভাবে বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারগুলোতে কিছু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আসা নিয়ে গেল গেল রব যাঁরা তুলছেন, তাঁরা কি এসব পেশার স্নাতকদের বিদেশমুখী হওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন?

 যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অভিবাসনকারী স্নাতকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ শ্রেণিরই। তাঁরা তো দেশই ছাড়ছেন।

 বকশিশ হিসেবে ছিটেফোঁটা কিছু বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়া তাঁদের থেকে দেশ আর কী পাবে? বরং বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে আসা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদেরা মেধার ছাপ রাখলে আমরা উপকৃত হব।

 আরেকটি বিষয় নজর দেওয়ার মতো। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা গড়পড়তা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে। স্নাতক বা তৎপরবর্তী পড়াশোনার জন্য তারা বিদেশমুখী হতে আগ্রহী। তবে একটি অংশ দেশে প্রকৌশল, মেডিকেল, কৃষি বা সাধারণ শিক্ষায় যান। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান নিয়ে অনেক লেখা ও বলা হয়। 

এখানে বেশি বাক্যালাপ না করে ধরে নিতে হয় মেধাভিত্তিক যে সিভিল সার্ভিস, তাতে আকর্ষণীয় পদে অধিকতর মেধাবীরাই যাবেন। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও কম আসছে না। তবে আনুপাতিক হার হ্রাস পাচ্ছে দিনে দিনে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম ধাপের প্রশ্ন বিশ্লেষণ

প্রশ্ন থাকে, এভাবে কয়েকজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা কৃষিবিদ বিভিন্ন সাধারণ ক্যাডারেই আসলে তাঁদের ঘাটতি পড়বে কি না? পড়ার তো কথা নয়। 

এসব বিষয়ে অনেক স্নাতক প্রতিবছর বের হচ্ছেন। তবে মানের প্রশ্ন এখানেও আসে। এটা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে বলে অভিযোগ আসে হরহামেশা। 

আর বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে তাঁদের কয়েকজন চলে গেলেও দেশের ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই। কারণ, এসব কর্মকর্তাই দেশের সরকার পরিচালনার অংশ হয়ে কাজ করবেন আগামী প্রায় ৩০ বছর। 

তাই বলতে হবে কিছুসংখ্যক প্রকৌশলী ও ডাক্তার বিসিএস সাধারণ ক্যাডারগুলোতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসে সমৃদ্ধ করছেন সিভিল সার্ভিস। এটা সুদূর অতীতের সফল ধারাবাহিকতা।

 এমনতর অবস্থা একতরফা হোক এমন কেউ চায় না। তবে দরজা বন্ধও করা যাবে না। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এতে আরও অধিক মেধাবী স্নাতক তৈরিতে আগ্রহী হওয়ার কথা। 

 তেমনি অতীতের গৌরবোজ্জ্বল উত্তরাধিকারধারী সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্নাতকেরা কেন পিছিয়ে পড়ছেন, এটা একটু তলিয়ে দেখে প্রতিকারের চিন্তা করতে পারে।

বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করার কৌশলঃ গণিত (জ্যামিতি )

 একুশ শতকের বাংলাদেশে নানা ঘরানা থেকে মেধার ভিত্তিতে আসা বিসিএস দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে সফল হবে।

লিখেছেন-  আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

বিসিএস সর্ম্পকে  যানতে BCS

বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যানতে আমাদের আছে  Job Circular

বিভিন্ন চাকরি পরিক্ষার ভাইভা অভিজ্ঞতা পড়তে আমাদের আছে  Viva Experience

বিসিএস লিখিত পরিক্ষার প্রস্ততি নিতে আমাদের আছে BCS WRITTEN PREPARATION


পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন PDF এবং অন্যান্য বিষয়ে আপডেট  থাকতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন- fb.com/groups/bcsspecials/

অথবা ফেসবুক পেজে লাইক দিন- fb.com/abcsspecial

ওয়েবসাইট: https://www.abcsspecial.xyz/

Post a Comment

1 Comments
  1. অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম।

    ReplyDelete

Top Post Ad

Bottom Post Ad

Ads Area